মানুষ ঘুমালে কানে শোনে না কেন

ভীর ঘুমের সময় চোখ-কানও ঘুমিয়ে থাকে। কানের তো কথাই নেই। অনেক সময় হাজার ডাকাডাকিতেও ঘুম ভাঙে না, যাকে বলে বেঘোরে ঘুম! তাহলে বিজ্ঞানীরা কেন এক কান জেগে থাকার কথা বলেন? এটা এল কোথা থেকে? আসলে আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, নতুন বা অপরিচিত জায়গায় সহজে ঘুম আসে না। সামান্য শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এ সময় ডান কান জেগে থাকে। আসুন দেখি, শরীর ও মস্তিষ্কবিষয়ক বিজ্ঞানীরা কী বলেন।

মানুষ ঘুমালে কানে শোনে না কেন

আরো পড়ুন : বার্ধক্য রোধ করতে কী খাবার গ্রহণকরা উচিত ?

. অপরিচিত পরিবেশে মস্তিষ্কের বাঁ পাশের কিছু অংশ জেগে পাহারা দেয়, অন্য পাশ গভীর ঘুমে অচেতন থাকে। কারেন্ট বায়োলজির ৯ মে সংখ্যায় বিজ্ঞানীরা এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। এ থেকে আমরা সহজে বুঝতে পারি, কোথাও বেড়াতে গিয়ে নতুন কোনো হোটেলে রাতের ঘুমে কেন কিছুটা অস্বস্তি থাকে।


২. ঘুমের সময় কিছু জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখির মস্তিষ্ক অর্ধেক জেগে থাকে। তিমি প্রভৃতি জলজ স্তন্যপায়ীদের অক্সিজেন গ্রহণের জন্য কিছুক্ষণ পরপর ভেসে উঠতে হয়। তাই তাদের মস্তিষ্কের এক পাশ জেগে থাকে। পুরো মস্তিষ্ক একসঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লে পানির নিচে অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবে। গাছের ডালে বসে ঘুমানোর জন্য কোনো কোনো পাখির ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। তাই ঘুমের মধ্যেও মস্তিষ্কের এক পাশ জেগে থাকে। এই কৌশলকে বলা হয় ‘ইউনিহেমিস্ফিয়ারিক স্লিপ’। বিজ্ঞানীরা অবশ্য মনে করেন, ঘুমের সময় মানুষের মস্তিষ্ক সাধারণত এ ধরনের অসামঞ্জস্য দেখায় না।

৩. বিজ্ঞানীরা স্লিপ ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখেছেন, গভীর ঘুমের সময় মানুষের মস্তিষ্কের বাঁ পাশের নার্ভ সেল নেটওয়ার্ক ডান পাশের নেটওয়ার্কের তুলনায় ঘুম পাড়ানোর কাজে কম ভূমিকা রাখে। এতে বোঝা যায়, ঘুমের ব্যাপারে মস্তিষ্কের বাঁ ও ডান অংশ একই রকম ভূমিকা রাখে না। অবশ্য দ্বিতীয়-তৃতীয় দিনে পরিবেশ চেনা-জানা হয়ে গেলে ঘুম স্বাভাবিক হয়ে আসে।


৪. নতুন জায়গায় ঘুমের প্রথম রাতে মস্তিষ্কের বাঁ পাশ সামান্য শব্দেই বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায়। বাঁ পাশে শব্দতরঙ্গ ডান কান দিয়ে ঢোকে। ডান কানের শব্দে সহজে ঘুম ভেঙে যায়। তাই বলা যেতে পারে, নতুন জায়গায় ঘুমানোর সময় ডান কান জেগে থাকে! অবশ্য এই হালকা ঘুমের অবস্থাটা ঘুমের প্রথম প্রহরেই বেশি থাকে। পরের দিকে থাকে কি না, তা এখনো গবেষণার বিষয়।


আরো পড়ুন : অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা কী কী?


৫. এটা অবশ্য স্বাভাবিক। কারণ, নিরাপদ পরিবেশ না থাকলে গভীর ঘুম আসবে কেন? পরিচিত পরিবেশেও কিন্তু সামান্য শব্দে ঘুম ভেঙে যেতে পারে, যদি সেই শব্দ বিপদের সংকেত হয়। যেমন বজ্রপাতের শব্দে অনেক সময় মায়ের ঘুম ভাঙে না, কিন্তু পাশে ঘুমিয়ে থাকা বাচ্চার সামান্য কান্নায় ঘুম ভেঙে যায়।

Post a Comment

Previous Post Next Post