সজিনা পাতার কথা বলতে গিয়ে ছোট বেলার অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল । আমাদের বাড়ির উঠানে একটা বিশাল বড় সজিনা গাছ ছিল।সেই গাছের পাতা প্রায় নিত্যদিন ই মানুষের একটা সবজি হয়ে খাবারের প্রয়োজন মিটাতো। আমার খুব প্রিয় একটি শাক, আমি ভীষণ ভালবাসি এই শাক খেতে।
আগেকার দিনে গ্রামেগঞ্জে প্রায় সব বাড়ির উঠোনেই থাকত সজিনা গাছ। আর হাজার ও বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ছোট বড় অসুখ সারানোর জন্য গ্রামের মানুষ জন এই সজিনা গাছের পাতা,ডাঁটা, ফুল ইত্যাদি ব্যবহার করত।
সজিনার বৈজ্ঞানিক নাম: Moringa oleifera.
প্রায় ৯০ রকম অত্যন্ত গুণকারী পুষ্টিগুনে ভরপুর এই সজিনাকে বলা হয় Miracle Moringa বা ' জাদু সজিনা'।
প্রচীন সভ্যতায় শরীর ও মন সুস্থ তথা রোগ নিরাময়ের জন্য একমাত্র ভেষজের প্রচলন ছিল। ভারতবর্ষে প্রাচীন কাল থেকেই ভেষজ তথা আয়ুর্বেদ চিকিৎসার ব্যবহার এখনও অবধি হয়ে আসছে।
বর্তমানে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলিতে ভেষজের প্রচলন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর সমীক্ষায় দেখা গেছে বিকল্প চিকিৎসা হিসাবে ট্র্যাডিশনাল হার্বাল মেডিসিন এঈ অদ্ভুত ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
মনে করা হয় সজিনা গাছ টির প্রধান উৎস হল ভারত।পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে এটি ভারতে জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে ধীরে ধীরে গ্রিক, রোমান ও মিশরীয় চিকিৎসা ব্যবস্থায় এটি অন্তর্ভূক হয়।
নিউট্রিশনাল ও মেডিসিনাল গুনাগুনে ভরপুর থাকার জন্য বিশ্বের দরবারে একে মিরাকেল ট্রি ও বলে।১৯৯৮ সাল থেকে WHO দরিদ্র মুখী দেশগুলিতে অপুষ্টি দূর করতে খাদ্যের বিকল্প হিসেবে একে উন্নীত করছে।
গবেষণায় দেখা গেছে সজিনার পাতা — বেদনানাশক, মূত্রকার, অ্যান্টি টিউমার, অ্যান্টি আলসার, কোলেস্টেরল কমাতে, ব্লাডপ্রেসার কমাতে, লিভার ঠিক রাখতে, রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে, ত্বকরোগের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
এছাড়া অ্যাজমা, সর্দি কাশি, মাথাব্যথা, গাউট, ডায়াবেটিস , হাম, মাম্পস, বসন্ত ইত্যাদি রোগ থেকে ও শরীর কে রক্ষা করে এর পাতা, ফুল এবং ডাটা।
এই গাছ অপুষ্টি দূর করতে সাহায্য করে।কাঁচা বা ভাঁজা অবস্থায় এ পাতার সমান গুনাগুন আছে।গবেষণায় দেখা গেছে সজিনা র পাতা খুবই পুষ্টিকর।এতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার মিনারেলস যেমন - ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ,কপার আছে।
গবেষণায় দেখা গেছে এর পাতায় কমলালেবু চেয়ে ৭ গুন বেশি ভিটামিন সি, গাজরের চেয়ে ১০ গুন বেশি ভিটামিন এ, দুধের চেয়ে ১৭ গুন বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে ১৫ গুন বেশি পটাশিয়াম এমনকি পালংয়ের চেয়ে ২৫ গুন বেশি আয়রন আছে।
সাধারণত সজিনা পাতা আমাদের এখানে ভেজে খাওয়ার ই রেওয়াজ আছে। কেউ কেউ তরকারি করে খায়, কেউ সিদ্ধ ও খায়। কেউ আবার কাঁচা পাতা বেঁটে রস করেও খায়।
প্রকৃতিক পুষ্টিগুনে ভরপুর এই সজিনার গুনাগুন আমাদের অনেকের অজানা। তাই চলুন একে আমরা নতুন করে হেলথ সাপ্লিমেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করি।
Post a Comment