হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে তোমরা সুস্বাস্থ্য প্রার্থনা কর। কারণ ঈমানের পর সুস্বাস্থ্যের চেয়ে অধিক মঙ্গলজনক কোনো কিছু কাউকে দান করা হয়নি।’ (ইবনে মাজাহ)
প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম দুধে দু’টি খেজুর মিশিয়ে খাবেন।খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলবেন,মুসলমান হলে জেনে থাকবেন এটা একটা সুন্নাহ। এছাড়া খেজুরের মধ্যে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। মন ভালো রাখতেও কার্যকরী দুধ ও খেজুর। চলেন জেনে ফেলি খেজুর ও দুধ একসঙ্গে খেলে কী হয়-
খেজুরে আছে প্রাকৃতিক শর্করা।আর দুধকে বলা হয় সুপার ফুড বা সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, সি,ভিটামিন বি-১২, নিয়াসিন ও রিবোফ্লভিন । এই দুই একসঙ্গে খেলে তার পুষ্টিগুণও বেড়ে যায়। শরীর দুর্বল লাগা, মাথা ঘোরা এমন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন সহজেই ইনশা আল্লাহ।
চোখে সমস্যা দেখা দিতে পারে যেকোনো বয়সেই। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতেও এই খেজুর দুধ খেতে পারেন। এছাড়াও চোখে অঞ্জনির সমস্যায়, যারা একটানা কম্পিউটারের সামনে কাজ করেন তাদের জন্য খেজুর দুধ উপকারী।
নানারকম চেষ্টার পরেও ওজন বাড়াতে পারছেন না, এমন অনেকেই আছেন। তাদের ক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারে খেজুর দুধ। কারণ এটি খুবই স্বাস্থ্যকর। টানা বেশ কয়েক সপ্তাহ খেলে ওজন বাড়বে। এছাড়াও শরীরের উজ্জ্বলতা বাড়বে দ্রুত।
কোরআন শরিফ প্রথম লেখা হয়েছিল খেজুর গাছের পাতায়।
আল্লাহ বলেন, অর্থ : 'আমি জমিনে উৎপন্ন করেছি শস্য-দ্রাক্ষী, শাক-সবজি, জয়তুন ও খেজুর বৃক্ষ।' সূরা-আবাসা, আয়াত : ২৭।
'খেজুর ও আঙ্গুর ফল থেকে তোমরা সাকার ও উত্তম খাদ্য তৈরি কর। নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।' সূরা- নাহাল, আয়াত : ৬৭, এ ছাড়া সূরা আনআমের নিরানব্বই নম্বর এবং সূরা মরিয়মের তেইশ নম্বর আয়াতেও খেজুরের উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে।
আসুন দেখি,খেজুর সম্পর্কে রাসূল (সা) কি বলেন-
হজরত সায়ীদ (রা.) বর্ণনা করেন, একদা আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে রসুলে পাক (সা.) আমাকে দেখতে তাশরিফ নিয়ে এলেন। রসুলে পাক (সা.) পবিত্র হাতের শীতলতা আমার অন্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। অতঃপর রসুলে আকরাম (সা.) এরশাদ ফরমালেন- 'তুমি অন্তরে কষ্ট অনুভব করছ। তুমি হারেস ইবনে কালদাহ সাকি্বফীর কাছে যাও। কারণ সে একজন চিকিৎসক। সে যেন মদিনার সাতটি আজওয়া খেজুর নিয়ে বীজসহ পিশে তোমার মুখে ঢেলে দেয়।' -আবু দাউদ, মিশকাত।
হজরত সাদ রাদিয়াআল্লাহু আনহু একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখতে যান এবং হৃদরোগের চিকিৎসার নসিহত পেশ করেন-
হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দেখতে এসেছিলেন। তিনি আমার বুকের ওপর হাত রাখলেন তখন আমি হৃদয়ে শীতলতা অনুভভ করলাম।তিনি বলেন, তোমার হৃদরোগ হয়েছে।এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে আজওয়া খেঁজুর খেতে দিয়ে বললেন, তুমি সাতদিন আজওয়া খেজুর খাবে তাহলে তুমি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।’ (আবু দাউদ)
বিষক্রিয়া বন্ধে : আজওয়া খেজুর বিষের কার্যক্ষমতা কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর। এই সম্পর্কে রসুল (সা.) এরশাদ ফরমাইছেন, 'আজওয়া জান্নাতের ফল। এর মধ্যে বিষের নিরাময় রয়েছে।' তিরমিজি, মিশকাতুল মাসাবিহ। 'হজরত সা'আদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল পাক (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সে দিন বিষ এবং জাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।' বুখারি শরিফ।অন্যদিকে,
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাদের উদরস্থিত গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে আমি তোমাদের পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। (সুরা নাহল, আয়াত : ৬৬)
রাসুল (সা.) বলেছেন, আর যখন তোমাদেরকে দুধ পান করানো হয়, তখন বলবে, হে আল্লাহ! আমাদেরকে এতে বরকত দিন এবং আরো বেশি দান করুন। কারণ, মানুষের খাদ্য তালিকায় দুধের চেয়ে উত্তম কোনো খাদ্য নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৩০)।
إرسال تعليق