দৈনন্দিন জীবনের রুটিন তৈরি কেমন হওয়া উচিত?

 এক একজনের দৈনন্দিন রুটিন এক একরকম হয়।আমরা যাঁরা সাধারণ মানুষ তাঁদের দৈনন্দিন রুটিন কাজ এবং প্রয়োজন অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়।

আজ থেকে পাঁচ বছর আগে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে একটা রুটিন তৈরি করা উচিত সেটাই আমি জানতাম না।তখন ঘন্টার পর ঘন্টা আমি গল্প করে সময় কাটিয়েছি।এবং খাওয়া দাওয়া করেছি,আর ঘুরেছি।বাইরের জগতের সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ ই ছিলো না। তখন ভাবতাম জীবনের সব সীমাবদ্ধতা শুধু আমার নিজের ছোট্ট পরিসরের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত।

আর এই ভাবনায় ভাবিত মানুষের সংখ্যা সর্বাধিক।এখনো প্রচুর মানুষ আছে যাঁরা জানেন ই না, জীবন কে কিভাবে পরিচালনা করতে হয়,এবং কী কী নীতি অবলম্বন করলে জীবনে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়।অথচ প্রতিটা মানুষই কিন্তু জীবনে সফলতা চাই।তবে বেশির ভাগ মানুষ ই সফলতা অর্জন করার পন্থা জানেন না।

এই কারণেই আমি প্রথমেই উল্লেখ করেছি, আমরা যাঁরা সাধারণ মানুষ তাঁদের দৈনন্দিন রুটিন কাজ এবং প্রয়োজন অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়। দেখুন, প্রচুর মানুষ আছে যাঁরা নিজের ইচ্ছা মতো দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করে,এবং তাঁর রুটিন অনুযায়ী তাঁর মতো সফলতা ও লাভ করে।

যেমন প্রচুর মানুষ আছে যাঁদের, জীবনের সব কিছুই প্রায় অগোছালো কিন্তু নিজের কাজ টা রুটিন মেনে করে ,ফলে তাঁর সাফল্য ঐ টুকুর মধ্যেই ঘোরাফেরা করে।

আবার কিছু মানুষ আছে যাঁরা জীবনের অন্য বিষয় গুলিকে সুন্দর ভাবে পরিচালনা করে কিন্তু কর্মক্ষেত্রে ততটা দক্ষতা অর্জন করতে পারে না।কারণ এই ব্যক্তি ও তাঁর নিজের সুবিধা অনুযায়ী দৈনন্দিন রুটিন তৈরি করেছে।ফলে তাঁর পরিকল্পনা অনুসারে সে ফল পাচ্ছে।

পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ ই এই দুই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত।কিন্তু জীবনে কাঙ্খিত সাফল্য পেতে গেলে অনেক কিছু আগে ত্যাগ করতে হবে।আপনি সাফল্য পেতে আপনার প্রিয় কোন জিনিস বা বিষয় ছাড়তে কতটা আগ্রহী? আপনার মন মতো চলতে আপনি শীর্ষতম স্থানে পৌঁছাতে পারবেন না।আপনাকে চলতে হবে সাফল্যের মর্জি অনুসারে।

আমরা কে না জানি বলুন, যে আজ যদি আমি নিজেকে একটু সময় দিই,সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে কর্মসূচি তৈরি করে এগিয়ে চলি, আজ যদি বাজে সময় নষ্ট না করি,বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে গল্প করার নেশা টা ত্যাগ করে,স্রেফ তিন থেকে চার বছর শুধু নিজেকে সময় দিই তাহলে তো আমার জীবনে সফলতা অবশ্যম্ভাবী।

এটা কিন্তু একটা বাচ্চা ও জানে, কিন্তু তবুও আমরা এই পদ্ধতি অবলম্বন করি না কেনো?

আসলে মানুষের মতো জোম কুঁড়ে প্রাণী এই পৃথিবীতে আর একটাও নেই। তার প্রথম উদাহরণ - মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতেই প্রায় দেড় বছর লাগিয়ে দেয়। নিজের পায়ে চলতে এতো টা সময় কোন প্রাণী ই নেয় না।

তাই আমরা সব জানি, বুঝি, এবং এটাও লক্ষ্য করি ,যে আমার পাশের বাড়ির ই হয়তো একজন কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্য অর্জন করেছে কিন্তু আমরা কখনোই তাঁর দিকে তাকায় না, আমরা তাকায় আমার পাশে যে ব্যর্থ ব্যক্তি আছে তাঁর দিকে।এবং নিজেকে সান্ত্বনা দিই তাঁকে দেখে, আর যে ব্যক্তি সাফল্য অর্জন করেছে তাঁর দিকে তাকায় সন্দেহের নজরে,এবং মন কে বলি ওর নিশ্চয়ই দাদা,কাকা, মামা কেউ না কেউ সাহায্য করেছে,তাই ও এতো কিছু করতে সক্ষম হয়েছে।

আর পৃথিবীর সামান্য সংখ্যক মানুষের রুটিন হয় প্রায় একি ধাঁচের। আপনি পৃথিবীর বিখ্যাত বিখ্যাত ব্যক্তি বর্গের দিকে লক্ষ্য করুন, তাহলে বুঝতে পারবেন আমাদের সমস্যা টা আসলে কোথায়!

আপনি আমাকে দৈনন্দিন রুটিন কেমন হওয়া উচিত জানতে চেয়েছেন মানে , আমি নিশ্চিত আপনি আপনার সময়ের মূল্য দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন।আপনি আপনার বিষয়ে সতর্ক হতে চাইছেন।

তাই আমি আপনাকে প্রথমেই নজর দিতে বলব সময়ের দিকে।

হ্যাঁ, একমাত্র আপনি যদি সময়ের মূল্য দিতে পারেন তাহলে সময় একদিন আপনার মূল্য দেবে।

তাই————

1. সূর্য ওঠার আগে আপনি উঠুন।প্রথম প্রথম ঘড়িতে ওঠার সময় সেট করে রাখুন।আমাদের মস্তিষ্ক ভীষণ ই সতর্ক, কিছু দিন পরে সে দায়িত্ব নিয়ে নেবে আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ে তুলে দেওয়ার জন্য।এবং চোখ খোলার পরে আর এক মিনিট ও বিছানায় থাকবেন না।

2. ধ্যান করুন প্রতিদিন কমপক্ষে আধঘণ্টা।সঙ্গে প্রনায়ম।

3. আপনি জীবনে কী কী অর্জন করতে চান তার একটা তালিকা তৈরি করুন।এবং এই তালিকা টা আপনার চোখের সামনে টাঙিয়ে রাখুন, যাতে আপনি সেটা সব সময় দেখতে পাবেন।এবং অবশ্যই প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে এবং রাতে শুতে যাওয়ার আগে ঐ তালিকা টি জোরে জোরে পড়ুন।যাতে প্রতিটা কথা আপনার সচেতন মন আপনার অবচেতন মনের কাছে পৌঁছে দেয়।

4. আপনি আপনার সারা দিনের কাজের একটা তালিকা তৈরি করুন।সময় মেপে চলুন, এক ফোঁটা সময় বাজে ভাবে নষ্ট করবেন না।ঠিক ঠিক সময়ে আপনার কাজ সম্পন্ন করুন।

5. দরকার ছাড়া সোস্যাল মিডিয়া য় সময় নষ্ট করবেন না।আপনি যদি অনলাইনে কাজ করেন তাহলে আপনি আপনার কাজ টুকু করে ওখান থেকে বেড়িয়ে আসুন। মানুষের জীবন নষ্টের একটা ফাঁদ হল সোশ্যাল মিডিয়া।তাই এই বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।

6. প্রতিদিন প্রচুর বই পড়ুন।পারলে বিদেশী লেখকদের বই পড়ুন। বইয়ের মধ্যেই জীবন পরিচালনার গুপ্ত রহস্য লুকিয়ে আছে।

তাই তো Goeth(গোথ)বলতেন——

" তুমি কি বই পড়ো? আমাকে বলো।তাহলে আমি বলে দেবো যে,তুমি কি ধরনের মানুষ।"

7.আপনার রুটিনের মধ্যে কিছুটা সময় প্রতিদিন প্রকৃতির সঙ্গে কাটানোর জন্য রাখুন।আকাশ দেখুন,এই সময় বিশেষ করে বিকাল বেলা দেখবেন আকাশে মেঘ গুলো কি সুন্দর খেলা করে, সারা পৃথিবী ব্যাপী ছুটে বেড়ায় দেখতে কি অপূর্ব সুন্দর লাগে।এছাড়া গাছের দিকে কিছু টা সময় তাকিয়ে থাকুন।গাছের সবুজ পাতার মধ্যে ও কত রঙ খেলা করে।সব সবুজ কিন্তু এক নয়।

এতে করে মন টা খুব ভালো থাকে।

8.সকালে ওঠা থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত পুরো সময় টাই থাকবে একটা ছকে বাঁধা।খুব সমস্যা না হলে নিয়মের বাইরে যাবেন না।

9.আপনার জীবনের যেটা লক্ষ্য সেই কাজে অনেক টা সময় ব্যয় করুন।এবং প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ টা বাড়াতে থাকুন।

10.পরিশেষে আবার ও বলছি, প্রতিদিন প্রতিটা সেকেন্ডের মূল্য দিন।আপনি যতটা সময় কে মূল্য দেবেন সময় আপনাকে তার অধিক পরিমাণে আপনার কাজের দাম দেবে।

পৃথিবীর কিছু সংখ্যক মানুষ ই কেবল নিজেকে রুটিনে বাঁধতে পারে এবং তাঁরাই জীবনে যেটা চাই সেটাই অর্জন করতে পারে। আর সব বিখ্যাত মানুষের মধ্যে এই একটি বিষয়ে দারুণ মিল।

আর সব গড়পড়তা মানুষের মধ্যেও কিন্তু ঐ একটি বিষয়ে মিল সেটা হলো নিজের ইচ্ছা মতো, প্রয়োজন বুঝে রুটিন তৈরি করে।এবং সেটাই হয় তাঁদের জীবন।আপনি সারাদিন সবার সঙ্গে খোশ গল্পে মেতে থাকবেন আর এদিকে আশা করবেন ভাগ্য একদিন না একদিন ঠিক আমার সহায় হবে। দুঃখের বিষয় ভাবনাই সার হবে ওমন দিন কখনোই আসবে না।

আপনি আজ যেভাবে দিন টা অতিবাহিত করছেন, ওটাই আপনার জীবন।এর বাইরে কিছু নয়।

আপনার ভবিষ্যত জীবন সুখের হোক এই ইচ্ছায় পোষণ করি।এবং আপনি নিজেকে রুটিনের মধ্যে প্রবেশ করাবেন এই আশা রাখি ।

ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post