বজ্রপাত কি

বজ্রপাত কি?

বজ্রপাতঃ

বজ্রপাত প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য গুলোর মধ্যে একটি এটি মানুষের পরিচিত সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর একটিও বটে সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার প্রায় সমান মাত্রার স্ফুলিঙ্গ আর ভয়াবহ গর্জন বহুকাল ধরেই মানুষের পিলে চমকানোর কাজটি দায়িত্বের সাথে পালন করে আসছে

বজ্রপাতের এই ভয়ঙ্কর সৌন্দর্যের সাথে সাথে আমাদের মনে বিজ্ঞানের আরেকটি চিরন্তন রহস্যের জন্ম দেয়, বজ্রপাতের কারণ কি? ছোটবেলায় এই প্রশ্নের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমরা বেশিরভাগ সময় উত্তর পেয়েছি, মেঘে মেঘে সংঘর্ষের ফলাফল হলো এই বজ্রপাত এই ভুল ধারণার অবসান- লেখাটির উদ্দেশ্য

বজ্রপাতের কারণঃ

পানিচক্রের নিয়মে জলাধারের পানি বাষ্পীভূত হয়ে মেঘ আকারে আকাশে আশ্রয় নেয় এই মেঘ- হল বজ্রপাতের ব্যাটারি বজ্রপাতের জন্য দায়ী মেঘ বৈদ্যুতিক চার্জের আধারের মত আচরণ কর যার উপরের অংশ পজিটিভ এবং নিচের অংশ নেগেটিভ চার্জে চার্জিত থাকে মেঘ কিভাবে চার্জিত হয় তা নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে বেশ মতভেদ থাকলেও সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত মতবাদ হচ্ছে, পানিচক্রে জলকণা যখন ক্রমশ উর্ধ্বাকাশে উঠতে থাকে তখন তারা মেঘের নিচের দিকের বেশি ঘনীভূত বৃষ্টি বা তুষার কণার সাথে সংঘর্ষের মুখোমুখি হয়

যার ফলে উপরের দিকে উঠতে থাকা অনেক বাষ্প কণা বেশ কিছু ইলেকট্রন হারায় এই মুক্ত ইলেকট্রন গুলো মেঘের তলদেশে জমা হয় এবং ইলেকট্রন হারানো পজিটিভ চার্জিত বাষ্পকণা মেঘের একেবারে উপরপৃষ্ঠে চলে যায় যার ফলশ্রুতিতে মেঘগুলো শক্তিশালী ধারক বা ক্যাপাসিটর এর বৈশিষ্ট্য লাভ করে মেঘের দুই স্তরে চার্জ তারতম্যের কারণে সেখানে শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি হয় এই বিদ্যু ক্ষেত্রের শক্তি মেঘে সঞ্চিত চার্জের পরিমাণের উপর নির্ভর করে

এভাবে বাষ্পকণা মেঘে সংঘর্ষ চলতে চলতে মেঘের উপরে এবং নিচে যথাক্রমে পজিটিভ নেগেটিভ চার্জের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে এতটাই শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরী করে যে তার বিকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থানরত ইলেকট্রন গুলো ভূপৃষ্ঠের আরো গভীরে চলে যায় ফলাফলস্বরূপ ওই নির্দিষ্ট এলাকার ভূপৃষ্ঠ শক্তিশালী পজিটিভ বিদ্যু ক্ষেত্রে পরিণত হয় এখন বজ্রপাতের জন্য শুধু যা প্রয়োজন তা হল বিদ্যু প্রবাহের জন্য সামান্য একটু বাহক বা কন্ডাক্টর কিন্তু আমরা জানি বাতাস বিদ্যু অপরিবাহী, তাহলে বজ্রপাত কিভাবে হবে?

বজ্রপাত যেভাবে হয়ঃ

মেঘের বিপুল শক্তিশালী বিদ্যুতক্ষেত্র তার চারপাশের বাতাসের অপরিবাহী ধর্মকে নষ্ট করে দেয় যাকে বলে Dielectric Breakdown মেঘে অবস্থিত বিদ্যুতক্ষেত্র যখন যথেষ্ঠ শক্তিশালী হয়(প্রতি ইঞ্চিতে প্রায় ১০,০০০ ভোল্ট), তখন তার আশেপাশের বাতাস পজিটিভ এবং নেগেটিভ চার্জে বিভক্ত হয়ে যায় এই আয়নিত বাতাস প্লাজমা নামেও পরিচিত বাতাস আয়নিত হয়ে মেঘ এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে বিদ্যু চলাচলের পথ বা শর্ট সার্কিট তৈরী করে দেয় এবং বজ্রপাত ঘটায়

সব উত্তর পাওয়া কিন্তু এখনও শেষ হয়নি তাহলে বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গ কোথা থেকে আসে? এখানে আমরা পাঠ্যপুস্তকের জারন-বিজারন প্রক্রিয়ার ধারণা ব্যবহার করব কোনো ধাতুর সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় ইলেকট্রন নিষ্কাশনের প্রক্রিয়াই হল জারন আয়নিত বাতাস বা প্লাজমা পরিবাহী হওয়ার কারণে এতে ধাতব বৈশিষ্ট্য প্রবলভাবে বিদ্যমান তাই বাতাসের অক্সিজেনের সাথে প্লাজমার বিক্রিয়ায় বজ্রপাতের স্ফুলিঙ্গের সৃষ্টি হয় এটাকে চাইলে আপনি প্রকৃতির welding বলতে পারেন

Post a Comment

أحدث أقدم