তেজস্ক্রিয়তা হলো কোন কোন ভারী মৌলিক
পদার্থের একটি গুণ যেগুলোর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত আলফা,
বিটা ও গামা
রশ্মি বিকরীত হয়।
আবিষ্কার
আলফা কণিকা
কাগজের মধ্যে দিয়ে
সম্পূর্ণভাবে, বিটা কণিকা
অ্যালুমিনিয়াম প্লেটের মধ্যে
দিয়ে সম্পূর্ণভাবে এবং গামা রশ্মি সীসার
মধ্যে দিয়ে আংশিকভাবে প্রতিহত হচ্ছে,ফরাসি
বিজ্ঞানী হেনরী বেকরেল ১৮৯৬ সালে এক্সরে নিয়ে গবেষনা করার
সময় এমন একটি
স্বতঃস্ফূর্ত প্রাকৃতিক ঘটনা আবিষ্কার করে ফেলেন
যা সারা বিশ্বের বিজ্ঞান জগতে দারুন
আলোড়ন সৃষ্টি করে।
তিনি দেখতে
পান যে, ইউরেনিয়াম ধাতুর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত বিশেষ
ভেদন শক্তি সম্পন্ন রশ্মি বা বিকিরন নির্গত হয়। তাঁর নামানুসারে এই রশ্মির নাম দেওয়া হয় বেকারেল রশ্মি। তিনি লক্ষ
করেন যে মৌল থেকে এই রশ্মি
নির্গত হয়, তা একটি সম্পূর্ন নতুন মৌলে রুপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত এই রশ্মি নির্গমন অব্যাহত থাকে।
পরবর্তীকালে মাদাম কুরি ও তাঁর স্বামী পিয়ের কুরি ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে দেখতে পান যে রেডিয়াম, পোলোনিয়াম, থোরিয়াম, আ্যক্টিনিয়াম প্রভৃতি ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস থেকেও বেকরেল রশ্মির মত একই ধরনের রশ্মি নির্গত হয়, যা এখন তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নামে পরিচিত। যে সব মৌল হতে তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় তাদেরকে তেজষ্ক্রিয় মৌল বলে। তেজষ্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের এই ঘটনাকে তেজষ্ক্রিয়তা(Radioactivity) বলে।
তেজষ্ক্রিয়তা সংজ্ঞা
তেজষ্ক্রিয় মৌলের তেজষ্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণের ঘটনাকে তেজষ্ক্রিয়তা বলে ।
বৈশিষ্ট্য
যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ৮২(82)-এর বেশী, সাধারণত সেই সকল পরমাণু তেজষ্ক্রিয় হয়। তবে ৮২র থেকে হাল্কা অনেক মৌলের-ই কিছু সমস্থানিক তেজষ্ক্রিয়।
তেজষ্ক্রিয় পদার্থ সাধারনতঃ আলফা, বিটা
ও গামা এই তিন ধরনের তেজষ্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করতে
পারে। তবে অনেক
ক্ষেত্রেই পজিট্রন, নিউট্রন, নিউট্রিনো, ইত্যাদিও নির্গত হতে পারে।
তেজষ্ক্রিয়তা একটি সম্পূর্ণ নিউক্লিয় ঘটনা, এর মাধ্যমে নিউক্লিয়াসের ভাঙনের ফলে একটি মৌল আরেকটি নতুন মৌলে রূপান্তরিত হয়।
নিউক্লিয় ঘটনা, তাই তেজষ্ক্রিয়তা কে চাপ, তাপ, বিদ্যুৎ বা চৌম্বক ক্ষেত্রের ন্যায় বাইরের কোন সাধারণ ভৌত প্রক্রিয়া দ্বারা এর সক্রিয়তাকে রোধ বা হ্রাস বৃদ্ধি করা যায় না। তবে অত দ্রুতবেগ নিউট্রন, বা সূর্যের অভ্যন্তরের মত তীব্র তাপমাত্রা, বা সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময়কালীন চাপের মত চরম অবস্থায় নিউক্লিয় বিক্রিয়া ঘটান সম্ভব।
তেজষ্ক্রিয় মৌলের অর্ধায়ু
যে সময়ে কোন তেজষ্ক্রিয় পদার্থের মোট পরমাণুর ঠিক অর্ধেক পরিমাণ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় তাকে ঐ পদার্থের অর্ধায়ু বলে। উদাহরণ হিসেবে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ কার্বন-১৪ -এর অর্ধায়ু ৫৭৩০ বছর। যদি শুরুতে ১০০ গ্রাম কার্বন-১৪ থাকে তা তেজস্ক্রিয়-ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ৫০ গ্রামে পরিণত হতে সময় লাগবে ৫৭৩০ বছর। উক্ত ৫০ গ্রাম একইভাবে আবার ২৫ গ্রামে পরিণত হতে সময় লাগবে আরও ৫৭৩০ বছর। এই কারণে কার্বন-১৪ এর অর্ধ-জীবন = ৫৭৩০ বছর। এইভাবে ১০০ গ্রাম তেজক্রিয় কার্বন -১৪ সম্পুর্ণরূপে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে (বাস্তবে C-14 থেকে N-14 এ পরিণত হতে) সময় লাগবে ৫১৫৭০ বছর।
إرسال تعليق