বাঁশ কোড়ল এর নানা উপকারীতা :
কোলেস্টেরল কমাতে : বাঁশের কোড়লে প্রচুর পরিমানে তন্তু বা ফাইবার থাকার কারণে এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। নিয়মিত বাঁশের কোড়ল খাওয়া হলে এটি খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL – Low Density Lipoprotein) মাত্রা কমায়।
হার্টের রোগীদের উপকারে : বাঁশের কোড়লে উপস্থিত ফাইটো নিউট্রিয়েন্টগুলি আমাদের হার্টকে সুস্ব্য রাখে এবং খারাপ LDL কোলেস্টেরলকে রক্তে দ্রবিভূত হতে দেয় না। এতে উপস্থিত পটাশিয়াম হার্ট বিট স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।
ওজন কমাতে : বাঁশের কোড়লে ক্যালোরী ও ফ্যাটের পরিমান অত্যন্ত কম থাকে আর তন্তুর পরিমান বেশি থাকে। যারা নিজেদের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার। এতে উপস্থিত তন্তু পেট ভর্তি রাখে আর খিদে কমায়।
ক্যানসার প্রতিরোধে : এতে উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, যা শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস আমাদের শরীরের কোশে অবস্থিত ক্রোমোজোমের DNA গুলির ক্ষতি সাধন করে ক্যানসার ঘটায়। এতে উপস্থিত সামান্য পরিমান ক্লোরোফিল কোশের মিউটেশনে বাঁধা দিয়ে ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে : বাঁশের কোড়লে উপস্থিত তন্তুগুলি বৃহদন্ত্র থেকে মুত্রের নির্গমন সহজতর করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে : এতে বিভিন্ন প্রকারের খনিজ ও ভিটামিন থাকার কারণে এটি রোগপ্রতিরোধে সহায়তা করে।
শ্বাস প্রশ্বাসের প্রদাহে : (Upper respiratory Track diseases) রোগ প্রশমন করে। বাঁশের কোড়ল সেদ্ধ করা জলের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে গলা বসা বা ব্যাথায় আরাম পাওয়া যায়।
স্ক্লেরোসিস রোধ করতে : এটি রক্ত সংবহনতন্ত্রে কোলেস্টেরল জমতে দেয়না ফলে রক্তের প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে, ফলে হৃদরোগ কম হয়।
হাড় শক্ত করতে : এতে যে পরিমান ক্যালসিয়াম থাকে তা আমাদের অস্থিতন্ত্রকে মজবুত রাখতে সহায়তা করে।
রক্ত স্বল্পতা কমাতে : এতে উপস্থিত লৌহ রক্ত স্বল্পতা কমাতে সহায়তা করে।
এছাড়াও বাঁশ কোড়ল সবজি হিসেবে নিয়মিত খেলে এটি শরীরের যে কোন অংশের প্রদাহ কমাতে পারে। ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা ভাইরাসের আক্রমণ জনিত প্রদাহ কমে যায় এটি নিয়মিত ডায়েটে রাখলে। সেই সাথে এটি হজমশক্তি বাড়ায়, ক্ষত তাড়াতাড়ি প্রশমিত করে এবং ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে।
ছবি : রান্না করা বাঁশ কোড়ল, যা সবজি খাবারে পরিণত হয়েছে।
এই হচ্ছে আমার সেই খাবার যে খাবারটি সেই শিক্ষিকার ঘৃণিত কিন্তু আমি বছরে একবার হলেও খেতে চাই।
বাঁশ কোড়ল।
সমাজ বিজ্ঞানের এক শিক্ষিকা প্রায়ই মুখ বাকিয়ে বলতেন, "এই তোমরা (আদিবাসী স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্য করে) আস্ত বাঁশ (বাঁশকোড়ল) গিলে হজম করো কীভাবে?"
এ কথাগুলি উনি "হেনস্তা কিংবা আশ্চর্য" কোন অর্থে বলতেন সেটা তখন একজন শিক্ষিকা বা গুরুজনের মুখে খুঁজতে যাইনি। অজানা ক্ষেত্রে আশ্চর্য হয়ে বলার কোনো সুযোগ ছিল না। কারণ বাজারে আদিবাসীদের থেকে কতো কিছু কিনতেন। তাই ওরকম বাঁশ (!) চোখে না পড়ার মতো বিষয় একদম ছিল না। অন্যদিকে যদি হেনস্তা হয়ে থাকে তাহলে শিক্ষিকার সেই ঘৃণিত বাঁশকোড়ল ওরফে বাঁশ, সেটিই আমার প্রিয় খাবার এবং বছরে একবার হলেও খেতে চাই...
পূর্বকথা : বাংলায় বাঁশ কোড়ল, ইংরেজি Bamboo Shoot আর চাকমা ভাষায় ভাচ্চুরী বলা হয়। বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্ঠির একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজি এবং প্রিয় খাবার। বাঁশ কোড়লে বহুবিধ ঔষধীগুণ রয়েছে। চীনারা বাঁশের কোড়লকে বলেন ‘স্বাস্থ্যকর খাবারের রাজা।’ এ বাঁশের কোড়ল হল বাঁশগাছের কচি কান্ড মুকুল যার বয়স ২ সপ্তাহ হওয়ার আগে অথবা উচ্চতা ১ ফুট হওয়ার আগে সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মুচমুচে টেক্সচারের জন্য অনেক মানুষ এটি খেতে পছন্দ করেন। এর মধ্যে একটি মিষ্টি গন্ধও আছে। এশিয় দেশগুলি যেমন জাপান, কোরিয়া , চিন, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন্স, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস, নেপাল সহ ভারতের কিছু কিছু জায়গার মানুষ এটিকে অনেকদিন ধরেই সবজি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতিবছর বাঁশ কোঁড়লের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৫০ হাজার টন। বিশ্ব বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ বাঁশ কোঁড়লের ক্রেতা জাপান। আর সবচেয়ে বেশি বাঁশ কোঁড়ল উৎপন্ন হয় চীনে। চীন প্রতিবছর বিশ্বের ৩৭টি দেশে গড়ে ১৩৭ হাজার টন টিনজাত বা প্যাকেটজাত বাঁশের কোঁড়ল রপ্তানি করে থাকে। কোরিয়া, জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুর, জার্মানী, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইডেন প্রভৃতি দেশে বাঁশের কোঁড়লের প্রচুর চাহিদা ও বাজার রয়েছে।
বাঁশ কোড়লে প্রচুর পরিমানে নানান পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। আবার এটিতে ক্যালোরী ও ফ্যাটের পরিমান খুবই কম। তাছাড়া এই সবজিতে আছে প্রচুর ফাইবার বা তন্তু।
তাজা বাঁশ কোঁড়লে রয়েছে : ৮৮-৯৩% পানি, ১.৫-৪% প্রোটিন, ০.২৫-০.৯৫% চর্বি, ০.৭৮-৫.৮৬% চিনি, ০.৬০-১.৩৪% সেলুলোজ এবং ১.১% খনিজ পদার্থ।
বাঁশ কোড়লে পুষ্টির মূল্য ও পরিমান :
ক্যালোরী ৪২%
ফ্যাট ০.৫ গ্রাম / ০%
স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.১ গ্রাম / ০%
পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.২ গ্রাম / ০%
মোনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০%
সোডিয়াম ৬ মিলি গ্রাম / ০%
পটাশিয়াম ৮০৫ মিলি গ্রাম / ২৩%
কার্বোহাইড্রেট ৮ গ্রাম / ২%
প্রোটিন ০.৯ গ্রাম / ৭%
ক্যালসিয়াম ৮ গ্রাম / ২%
ভিটামিন – C 10%
লৌহ ৪%
ভিটামিন – B6 20%
ম্যাগনেশিয়াম ১%
Post a Comment