গোলমরিচ এর উপকারিতা কি কি? গোলমরিচ বা কালোমরিচ কেন খাবেন

গোলমরিচ বা কালোমরিচ কেন খাবেন

গোলমরিচের আদিভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ। প্রাচীনকাল থেকেই খাদ্যে মসলা হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গোলমরিচকে বলা হয় মশলার রাজা। কারণ এটির মত গুনাগুণ নাকি আর কোনও মশলায় এত নেই।

ভিটামিন (B2, B6, K,C) ও মিনারেলে (ম্যাংগানিজ, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, পটাশিয়াম) ভরপুর সহজলভ্য এ মসলাটি।

গোলমরিচে প্রচুর আশ, প্রোটিন, শর্করা রয়েছে।

গোলমরিচ রান্নাবান্নার কাজ ছাড়াও ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।

এটি ডায়রিয়া, হার্টের অসুখ থেকে শুরু করে দাঁতের অসুখ অ্যানিমিয়া এমনকি সর্দি কাশিতে ও বেশ কাজ দেয়।

চলুন দেখে নি গোলমরিচের ৯টি উপকার সম্পর্কে

১.হজমে সাহায্য করে

গোলমরিচের মধ্যে পিপারিন নামক উপাদান থাকে, সেই জন্যই এটি ঝাঁঝালো স্বাদের হয়।গোলমরিচ জিভের টেস্ট বাডসগুলোকে সক্রিয় করে তোলে, তখন স্টমাক থেকে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয়ে খাবার হজমে সাহায্য করে।

আর ঠিক ভাবে খাবার হজম হলে কোষ্ঠকাঠিন্য,ডায়রিয়ার মত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।পেটে গ্যাস হওয়া রুখতেও গোলমরিচের জুড়ি মেলা ভার।

২.ক্যালোরি কমায়

আজকাল প্রায় সবাই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত। গোলমরিচ ওজন কমানোর কাজটি খুব ভালোভাবে করে, কোনো রকম ব্যায়াম করা ছাড়াই।

গোটা মরিচের খোসা অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে ও ফ্যাট সেলগুলোকে ভেঙে ফেলে, তাই অতিরিক্ত ফ্যাট শরীরে জমতে পারে না। ওজনও বাড়ে না।

ফলে গোলমরিচ দেওয়া খাবার খেলে কমতে থাকে শরীরের অতিরিক্ত মেদ।

৩.ক্যান্সারের অন্যতম ওষুধ

ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এতে আছে ভিটামিন A , C ও প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যেটি ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেলসে্র হাত থেকে এবং আমাদের শরীরকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার হাত থেকে বাঁচায়।

গোলমরিচ- সেলেনিয়াম, কারকুমিন, বিটা- ক্যারোটিন, ভিটামিন বি; এসবের নিউট্রিশাস ভ্যালু বাড়িয়ে দিয়ে পরিপাক তন্ত্রের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে।

কানাডার এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, গোলমরিচ মলদ্বারের স্ট্রেস কমিয়ে দিয়ে কোলন ক্যান্সার হওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

৪.উচ্চ রক্তচাপ কমায়

গবেষণায় প্রমাণিত যে, গোলমরিচের নিয়মিত সেবন উচ্চ রক্তচাপ কমায় ও রক্তের প্রবাহ ঠিক রাখে। যেকোনো সংক্রমণ (পোকামাকড়, ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস) থেকেও রক্ষা করে।

মরিচের ঝাল কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। মরিচে বিদ্যমান ‘ক্যাপ্সাইসিন’ শরীরে LDL(low-density lipoprotein / Bad Cholesterol) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

৫.রূপচর্চায়

গোলমরিচের এন্টিঅক্সিডেন্টের কাজ অনেক বেশি। যেমন- ফ্রি রেডিকেল কমায়, যা মুখে বয়সের ছাপ পড়ার জন্যে দায়ী। এটি শরীরকে ভেতর থেকে সচল রাখে।

বাইরের ক্ষতিকারক সূর্য রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। গোলমরিচ গুঁড়া করে, স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বক থেকে মৃত কোষ দূর হয়। ফলে ত্বকে সহজে অক্সিজেন চলাচল করতে পারে।

এছাড়া পিগমেন্টেশন ও অ্যাকনে দূর করতেও সাহায্য করে গোলমরিচ।

  1. খুশকি দূর করে:- যাদের চুলে খুশকি রয়েছে, গোলমরিচ তাদের জন্যে উত্তম। এ ক্ষেত্রে এক চা-চামচ গোলমরিচের গুঁড়া, এক কাপ টক দই, এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগানোর ৩০ মিনিট পরে শুধু জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে পরের দিন শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
  2. চুলের যত্নে:- এক চা-চামচ গোলমরিচের গুঁড়া, দুই চা-চামচ লেবুর রস, দই এক কাপ ও ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে মাথায় লাগাতে হবে (স্ক্যাল্পে)। তারপর ১৫-২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন চুলের যত্ন নিলে চুলের গোড়া শক্ত হবে, ঝলমলে ও সিল্কি হবে। একইসঙ্গে টাক হওয়া থেকেও রক্ষা করবে।

৬.মুখের যত্নে

ঠোঁটে ঘা হলে, দাঁতের মাংস লাল হলে, দাঁতে ক্যাভিটি বা ব্যথা হলে, গোলমরিচ সেই ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।

সামান্য গোল মরিচের গুঁড়ার সঙ্গে লবন ও জল মিশিয়ে গরম করে গড়গড়া করলে মাড়ির ঘা দূর হয়।

দাঁতে ব্যাথা করলে গোলমরিচ বেটে লাগালে উপকার হয়। এছাড়া মুখের ভেতরের দুর্গন্ধ দূর করতেও গোলমরিচ উপকারী।

৭.মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায়

গোলমরিচ সেরোটোনিন ভেঙে ফেলে যা মস্তিষ্কের জন্যে ক্ষতিকর। একটা সময় বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের নিউরনগুলোও মারা যেতে শুরু করে।

গোলমরিচ এই নিউরনগুলোকে দেরিতে ভাঙতে সাহায্য করে। অর্থাত্‍ মস্তিষ্কের বয়স বেড়ে যাওয়া রোধ করে ও অ্যালজাইমার রোগ থেকেও রক্ষা করে।

৮.ডায়াবেটিস

রক্তের সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে গোলমরিচ। ২০১৩ সালে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, গোলমরিচ সেই এনজাইমকে ভেঙে ফেলে যেটা শর্করা খাবারকে গ্লুকোজে পরিণত করে। এছাড়াও শরীরের গ্লুকোজকে ধীরে ধীরে শোষণ করতে সাহায্য করে।

৯.সর্দি কমাতে সহায়তা করে

সর্দি কাশিতেও এই গোলমরিচ দারুন ভাবে কাজ করে। এক চামচ গোলমরিচ গুড়ো ও মধু এই সমস্যার সমাধান করে। এটি বুকে জমা সর্দি তুলতেও সাহায্য করে। যেকোনো ভাইরাল ইনফেকশন রোধ করে।

গরম জলে গোলমরিচ আর একটু ইউক্যালিপটাস অয়েল মিশিয়ে, সেই স্টিমটা নিলে বন্ধ নাক ছেড়ে যায়। হালকা সর্দি কাশি ছাড়াও যদি জ্বর আসে তাতেও গোলমরিচ কাজে দেবে। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন C, যা অ্যান্টিবায়োটিকের মত কাজ করে।

জ্বরের সময় গোলমরিচ খেলে অত্যন্ত ঘাম হয় এবং জ্বর ছেড়ে যায়। গলা ব্যাথা কমাতেও সাহায্য করে। তাই ঠাণ্ডা লাগলে গোলমরিচ খান।

সর্দি কাশি হলে মুখে অরুচি আসে। কিছুই খেতে ভালো লাগেনা। মুখে স্বাদ আনার জন্য গোলমরিচের সঙ্গে একটু গুড় মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।

হালকা ঠাণ্ডা লাগলে আগে গোলমরিচ খান। তারপর ওষুধ। আর যদি সুস্থ্য থাকতে চান, তাহলে রোজ রান্নায় এবার থেকে একটু করে গোলমরিচ দিতে ভুলবেন না।

তাহলে এবার বুঝতে পারছেন তো গোলমরিচকে কেন মসলার রাজা বলা হয়ে থাকে

Post a Comment

أحدث أقدم