সেই ছোটবেলা থেকে পড়ছি মানুষের শরীরের গড় স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬° ফারেনহাইট। কিন্তু এটা কতো পুরনো গবেষণার ফল জানেন? সেই ১৮৬৮ সালে জার্মান চিকিৎসক কার্ল রেইনহোল্ড আগস্ট ওয়ান্ডারলিচ প্রায় ২৫,০০০ মানুষের থেকে দশ লক্ষেরও বেশি বার তাপমাত্রা মেপে এটা বার করেছিলেন।
অতো আগের ফল এখন টিকবে না স্বাভাবিক। তাহলে বর্তমানেরটা নিয়ে জানা প্রয়োজন।
বর্তমানে গড় স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৮.২° ফারেনহাইট। যদিও স্বাভাবিক তাপমাত্রাকে একেবারে নির্দিষ্ট করে না ধরে একটা রেঞ্জে ফেলা হয়েছে এখন।
বাচ্ছাদের ক্ষেত্রেঃ ৯৭.৯° ফারেনহাইট (৩৬.৬° সেলসিয়াস) থেকে ৯৯° ফারেনহাইট (৩৭.২° সেলসিয়াস)।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেঃ ৯৭° ফারেনহাইট (৩৬.১° সেলসিয়াস) থেকে ৯৯° ফারেনহাইট (৩৭.২° সেলসিয়াস)।
বয়স্কদের ক্ষেত্রেঃ ৯৮.৬° ফারেনহাইটের (৩৭° সেলসিয়াস) নিচে।
বুঝতে পারছি নিশ্চয় শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কত হবে সেটা বয়সের উপর বেশ নির্ভরশীল। তবে সবার যে একেবারে এই রেঞ্জের সাথে মিলে যাবে তাও নয়, ১° ফারেনহাইট (০.৬° সেলসিয়াস) কমবেশিও হতে পারে। তাছাড়া পরিবেশ পরিস্থিতি, কাজ কর্মের উপরও অনেকাংশে নির্ভর করে।
এবার আসি মূল প্রশ্ন প্রসঙ্গে। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা এমন নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকে কেন? কম বা বেশি হলে সমস্যা কোথায়?
তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে যা যা হতে পারে-
- শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪° ফারেনহাইটের উপরে চলে গেলে জ্বর হয়েছে ধরা হয়। জ্বর কিন্তু কোন রোগ নয়, এটা আমাদের শরীরের একটা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। কোন জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে, ওটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শরীরের তাপমাত্রা একটু বাড়িয়ে নেবার প্রয়োজন পড়ে। জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করে আবার স্বাভাবিকে চলে আসবে।
- কোন জীবাণুর আক্রমণ ছাড়াই যদি ১০০.৪° ফারেনহাইটের উপরে চলে যায় এবং তা স্বাভাবিক ভাবে নামতে না চাই তবে এটাকে বলা হয় হাইপারথারমিয়া। এভাবে ১০৪° ফারেনহাইটের উপরে চলে যাওয়া বেশ খারাপ। কেন?
- তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত ঘামের ফলে ডিহাইড্রেশন হয়ে যেতে পারে। ফলস্বরূপ শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে, হতে পারে মাথা ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য।
- মাংস পেশির মধ্যে তীব্র অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে।
- শরীরের কোন একটা অর্গান ফেইল করতে পারে।
- হিট স্ট্রোকের কবলে পড়ে জীবন চলে যেতে পারে।
তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে যা যা হতে পারে-
- শরীরের তাপমাত্রা ৯৫° ফারেনহাইট বা এর নিচে নেমে যাওয়াকে বলা হয় হাইপোথারমিয়া। ফলে-
- শরীর অতিরিক্ত কাঁপতে থাকবে
- ক্লান্তি অনুভূত হবে
- কথা বলতে সমস্যা হবে
- স্মৃতিশক্তির উপর প্রভাব ফেলবে
- সময়মত পদক্ষেপ না নিলে জীবন চলে যেতে পারে
আমাদের শরীর অনেকগুলো অঙ্গ-তন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত। সবার কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য তাপমাত্রা খুবই জরুরী। এককথায় বলতে গেলে শরীরের সকল কার্যক্রম ঠিকভাবে চলার জন্যই নির্দিষ্ট তাপমাত্রার দরকার পড়ে। কমবেশি হয়ে গেলে ঠিক করে নেবার ব্যবস্থাও রয়েছে। সমস্যা হয় তখনই যখন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।
Post a Comment