স্মার্টফোনে কোন ক্যামেরার কী কাজ?|What is the function of camera on smartphone?

 স্মার্টফোন হিসেবে আমার বছর ছয়েক পুরোনো ওয়ানপ্লাস এক্স চমৎকার। নকশা, ডিসপ্লে, র্যাম—সব দিক থেকেই। তবে পেছনে ক্যামেরা একটি। সেটাতে ছবি একদম খারাপ আসে না। তবে এখন মোটামুটি সবার ফোনের মূল ক্যামেরা অন্তত দুটি। তিন বা তার বেশি ক্যামেরাও দেখা যায়।

What is the function of a camera on a smartphone?

এখন প্রশ্ন হলো, ফোনে এক ক্যামেরা থাকায় আমি কি সবার চেয়ে পিছিয়ে পড়ছি? ফোনে যে ছবি তুলছি, তা কি যথেষ্ট না? নাকি এক ক্যামেরাই যথেষ্ট? এই লেখার শেষ নাগাদ চলুন আমরা সে উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করি।
আলোচনার সুবিধার্থে আমরা ‘আইফোন ১২ প্রো’র ক্যামেরা সিস্টেম এখানে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করব। অ্যাপলের স্মার্টফোনটির পেছনে ক্যামেরা মোট তিনটি। একটি ওয়াইড লেন্স, একটি আলট্রা-ওয়াইড লেন্স এবং অপরটি টেলিফটো লেন্স। সঙ্গে ডেপথ সেন্সর হিসেবে একটি লাইডার স্ক্যানার আছে।
ওয়াইড অ্যাঙ্গেল বা টেলিফটো শব্দগুলোর সম্পর্কে আপনি হয়তো জানেন। তবু দুটি লাইন থাকুক এখানে। আর এই শব্দগুলোর আগে মাথায় রাখতে হবে ক্যামেরার ফোকাল লেংথ সম্পর্কে


ফোকাল লেংথ কী?
আলোকচিত্রীরা দেখবেন তাঁদের ক্যামেরার লেন্সগুলো এমএম বা মিলিমিটারে উল্লেখ করেন। যেমন ৫০ এমএম লেন্স, ৭০-২০০ এমএম লেন্স, ১৮-১৩৫ এমএম লেন্স ইত্যাদি।
মিলিমিটারের এই হিসাব হলো ফোকাল লেংথের। ক্যামেরার ইমেজ সেন্সর এবং লেন্সের মধ্যে দূরত্ব বোঝায়। ফোকাল লেংথ দুটি বিষয় নির্ধারণ করে দেয়। এক, কোনো দৃশ্যের কতটা অংশ ক্যামেরায় ধারণ করবে। দুই, সে দৃশ্য কতটা বড় করে দেখাবে।
ফোকাল লেংথ যত কম হবে, ছবির ফ্রেম তত বড় হবে। উল্টোটা হলে, দূরের দৃশ্য তত বড় বা জুম করে দেখাবে। এ জন্য ২০০ এমএম লেন্সে দূরের আর ১০ এমএম লেন্সে কাছের ছবি ধারণ করা হয় ক্যামেরায়।
স্মার্টফোনে একাধিক ক্যামেরা যুক্ত করা হয় এই ফোকাল লেংথের বিচারে। কোনোটা টেলিফটো লেন্স, কোনোটা ওয়াইড লেন্স, আবার কোনোটা আলট্রা-ওয়াইড লেন্স হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
টেলিফটো লেন্স
ক্যামেরায় দূরের বিষয়বস্তু দুইভাবে জুম করা যায়। ডিজিটাল ও অপটিক্যাল জুম। বেশির ভাগ পুরোনো স্মার্টফোনে ডিজিটাল জুম ব্যবহার করা হয়।
ডিজিটাল জুমে ছবির কোনো একটা অংশ সফটওয়্যারের মাধ্যমে বড় করে দেখানো হয়। এতে প্রায়ই ছবির মান খারাপ হয়। বিশেষ করে বেশি দূরের বিষয়বস্তু জুম করে দেখানো হলে।
তবে ডিএসএলআর ক্যামেরার লেন্সে ব্যবহার করা হয় অপটিক্যাল জুম। এতে ফোকাল লেংথ কমানো-বাড়ানোর সুযোগ থাকে। ফলে ছবির মান অক্ষুণ্ন থাকে।
এখন প্রশ্ন হলো, ডিএসএলআর ক্যামেরার লেন্সের মতো অপটিক্যাল জুমের সুবিধা স্মার্টফোনে দিলেই তো হয়, তা কেন করা হচ্ছে না? করা যে হয়নি, তা না। তবে সে স্মার্টফোন জনপ্রিয়তা পায়নি। কেন পায়নি, তা নিচের ছবিতে দেখুন। এত ভারী আর আর মোটা স্মার্টফোন কে পকেটে নিয়ে ঘুরতে চায়?
এসব কথা বিবেচনায় রেখে আইফোন টেনএস এবং স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৯-এর মতো স্মার্টফোনের ক্যামেরায় মূল লেন্সের সঙ্গে আরেকটি লেন্স যোগ করা হয়। সেটি বেশি ফোকাল লেংথের। নতুন আইফোনগুলোতে দ্বিগুণ অপটিক্যাল জুমের যে অপশন আছে, সেটি চালু করলে মূলত আইফোনের মূল লেন্সের বদলে দ্বিতীয় লেন্সে ছবি ধারণ করে। এতে ছবির মান মোটামুটি ঠিক রেখেই জুম করার সুবিধা পান ব্যবহারকারীরা। লেন্সটি হলো টেলিফটো লেন্স। অর্থাৎ, দূরের ছবি বা জুম করে ছবি তোলার ক্ষেত্রে টেলিফটো লেন্স ব্যবহার করতে হবে।
ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্স
আবার মনে করুন, আপনি প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তুলবেন। সে ক্ষেত্রে ছবির বিষয়বস্তু বেশ বড় পরিসরের। প্রয়োজন পড়বে ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্সের। এই লেন্সগুলোর ফোকাল লেংথ কম হওয়ায় ফ্রেমে বিষয়বস্তুর অনেকটা চলে আসে।
একটি ছবি সফটওয়্যারের মাধ্যমে জুম করা যায়, দূরের বিষয়বস্তু কাছে এনে দেখা যায়। তবে কোনো সফটওয়্যারেই ছবির ফ্রেম বড় করা যায় না। অর্থাৎ, ধারণকৃত ছবির আশপাশটা ফ্রেমে আনা যায় না। আর সে কারণেই অনেক স্মার্টফোনে মূল লেন্সের সঙ্গে আলাদা ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্স যুক্ত করা হয়। সাম্প্রতিক স্মার্টফোনগুলোতে এমন চল দেখা যাচ্ছে।
অবশ্য ফোনের সামনের ক্যামেরায় কিন্তু আগে থেকেই ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্স ব্যবহার করা হয়। এতে গ্রুপ সেলফিতে একসঙ্গে অনেক মানুষ এঁটে যায়।
ডেপথ সেন্সর
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজারে আসা প্রায় সব স্মার্টফোনের ক্যামেরা অ্যাপে পোর্ট্রেট মোড থাকে। পোর্ট্রেট মোডে বিষয়বস্তু ফোকাসে রেখে পেছনের অংশটা ঝাপসা করে দেওয়া হয়। ছবিতে ‘বোকেহ আবহ’ তৈরির জন্য কিছু ফোনে বিশেষায়িত লেন্স থাকে, যেটির কাজ লেন্স থেকে বিষয়বস্তুর এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের দূরত্ব বোঝার চেষ্টা করে। এই লেন্সগুলো ডেপথ সেন্সর। অনেক স্মার্টফোনে অবশ্য দ্বিতীয় লেন্সই ডেপথ সেন্সর হিসেবে কাজ করে।
মনোক্রোম লেন্স
কিছু কিছু ক্ষেত্রে রঙিনের চেয়ে সাদাকালো ছবির আবেদন বেশি হতে পারে। বেশির ভাগ স্মার্টফোনে ছবি তোলার পর ফিল্টার ব্যবহার করে সেটি সাদাকালো করা হয়। তবে বিশেষায়িত মনোক্রোম লেন্স থাকলে এমন ছবিগুলোতে বিষয়বস্তু আরও চমৎকারভাবে ফুটে ওঠে।
ফোনে একাধিক ক্যামেরার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
স্মার্টফোনে একাধিক ক্যামেরা প্রয়োজন কি না, সেটা একটা প্রশ্ন হতে পারে। এর উত্তর একবাক্যে দেওয়া মুশকিল। কারণ, স্মার্টফোনে দিন দিন পেশাদার ক্যামেরার মতোই ছবি তোলার সুবিধা যুক্ত হচ্ছে। আর এই ক্যামেরাগুলোর পূর্ণ সুবিধা পেতে চাইলে দুটি লেন্স একটির চেয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভালো। কারণ, জুম করার প্রয়োজন হলে টেলিফটো লেন্সের অপটিক্যাল জুমের সাহায্য নিতে পারেন। ছবির ফ্রেম বড় করতে চাইলে ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। ডেপথ সেন্সরের সাহায্যে বোকেহ আবহের চমৎকার পোর্ট্রেট তুলতে পারবেন। অনেক স্মার্টফোনে সব কটি লেন্স একসঙ্গেও কাজে লাগানোর সুবিধাও থাকে। আরও দুটি বিবেচ্য বিষয় হলো, আপনার এত সুবিধা প্রয়োজন আছে কি না এবং বাড়তি এই সুবিধার জন্য আপনি বাড়তি অর্থ খরচ করতে চান কি না।
©প্রথম আলো

Post a Comment

أحدث أقدم