কিডনি এবং পাকস্থলী সুস্থ রাখার উপায় কী?

 ★কিডনি

কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতিবছর অনেক মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। এ ধরনের রোগের চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নেয়া উচিত।

মানুষের শরীরে দুটি কিডনি থাকে যেগুলো শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ছেঁকে ফেলে। এই কিডনি যদি আপনার শরীরের কাজ না করে তবে আমরা বলে থাকি কিডনি নষ্ট হতে চলেছে। আর কিডনি কাজ না করলে শরীরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে।

তাই কিডনি ভালো রাখাতে হলে খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এমন কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে আপনার কিডনি অসুস্থ হয়ে পড়বে। আসুন জেনে নেই কিডনি ভালো রাখতে হলে যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না।

১. প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত। তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।

২. মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করার অভ্যাস করুন।

২. গরুর মাংস, শুকরের মাংস ইত্যাদি খেলে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এমনকি চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডলস এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদামও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

৩. খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দুর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন এড়িয়ে মাছ বা ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখুন।

. রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করুন।

৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান। সুগার বেশি থাকলে মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।

৬. কম বেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য একেবারেই ভালো নয়। নিয়ম না জেনে নিজে ওষুধ খাবেন না।

৭. মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি এর প্রয়োজন নেই। নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশংকা থাকে। তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।

৮. অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিঙ্কস খেয়ে থাকেন। এ ধরনের পানীয় কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

৯. ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে এবং এর ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। ফলে ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ী ব্যক্তি একপর্যায়ে গিয়ে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়।

কিডনির পরীক্ষা করান

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারও কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।

লেখক : নেফ্রোলজি বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল

★পাকস্হলী

আমাদের পরিপাকতন্ত্রের কাজ শুধুমাত্র খাবার দাবার শোষণ করা নয়, বরং এর-চাইতেও আরও বেশি কিছু।

আমাদের শরীরে যে পরিমাণ রোগজীবাণু রয়েছে সেগুলো আমাদের শরীরকে অসুস্থ করে ফেলতে পারে।

অন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে কিনা সে বিষয়ে এখনও গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশ্বে ভোজন রসিক হিসেবে বাঙালি বেশ পরিচিত। যেকোনো খাবারকে মজাদার করে খেতে এ দেশের মানুষের জুড়ি নেই। মজার সেসব খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুরও তোলেন। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখনই, যখন খাবারগুলো ঠিকমতো হজম না হয়। যার ফলে পেটে বাঁধে গোলমাল। নষ্ট হয়ে যায় খাওয়ার রুচি। যার প্রভাব পড়ে গোটা শরীরের ওপর। তাই পেট পরিষ্কার রাখার কোনো বিকল্প নেই। আর এজন্য যেসব খাবার খেতে হবে তা নিয়ে আমাদের আলোচনা।

চা এবং কফি

কফি লিভারকে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। এটি লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি ও নানা ক্ষতিকারক প্রদাহ কমায়। পাশাপাশি লিভারের রোগীদের বিভিন্ন জীবাণু প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়। দিনে যারা কমপক্ষে তিন কাপ কফি পান করেন তারা অন্যদের চেয়ে খুব কম পেটের সমস্যায় ভোগেন বলে একটি গবেষণায় দেখা গেছে।

অন্যদিকে আর একটি গবেষণা বলছে, গ্রিন টি লিভার ভালো রাখার জন্য খুবই কার্যকরী। দিনে পাঁচ-দশ কাপ চা আপনাকে সতেজ ও কর্মক্ষম রাখতে উপকারী। তবে এর চেয়ে বেশি চা পান করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কফির মতো চাও লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। পেটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে সুস্থ রাখে। এছাড়া ওজন কমাতে গ্রিন টির জুড়ি মেলাভার।

জাম্বুরা

টক জাতীয় ফলের মধ্যে জাম্বুয়া খুবই জনপ্রিয়। গ্রাম-শহর সবখানেই এই ফলটি উল্লেখযোগ্য হারে দেখা যায়। এতে থাকা নারিনজিনিন নামে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভারের জন্য দুর্দান্ত কাজ করে। এটি লিভারের চারপাশে জমা চর্বি কমায় ও সংক্রামক টিস্যু বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সমৃদ্ধ এই ফলটির ছোট ছোট কোয়ার সঙ্গে অনেক আঁশও পেটে চলে যায়। এই আঁশ হজমের সমস্যা কাটিয়ে লিভারকে সুস্থ রাখে।

ব্লুবেরিস এবং ক্র্যানবেরিস

এই দুটি ফলে অ্যান্টোকাইনিনস নামে একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। শীতের মৌসুমে এর ব্যাপক ফলন হয়। যা লিভার সুস্থ রাখতে দারুণ কাজ করে। তিন থেকে চার সপ্তাহ প্রতিদিন ফলটি খেলে বিভিন্ন ক্ষত, দেহের টিস্যু ও লিভার সুরক্ষায় আশানুরূপ ফল দেয়। ব্লুবেরির রস লিভার ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। এটি মানবদেহের জন্য আরও কী কী কাজ করে তার জন্য নতুন নতুন গবেষণা চালাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

আঙুর

বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে আসলেও বাংলাদেশে আঙুর একটি সুপরিচিত ফল। এর রসালো স্বাদ সব বয়সীদেরই আকৃষ্ট করে। আঙুর দেহের প্রদাহ কমায় ও নানা রকম ক্ষতি থেকে লিভারকে রক্ষা করে। নিয়মিত আঙুর খেলে লিভার ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে। এছাড়া হজমের ব্যাপারেও এটি দারুণ ওস্তাদ। একটি ছোট গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালকোহল গ্রহণ ছাড়াই যারা লিভারের নানা রোগে ভোগেন, নিয়মিত আঙুর খেলে তিন মাসের মধ্যে তাদের লিভার আবার আগের মতো সক্রিয় হয়ে উঠবে।

প্রিকলি পেয়ার

এটি এক ধরনের ক্যাকটাস জাতীয় ফল। স্থানীয় ফলের দোকানে এই ফলটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাইরের দেশগুলোতে অ্যালকোহল পান করার আগে গবেষকরা এই ফলের রস পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে বমি ভাব দূর হয়। অর্থাৎ অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা এড়াতে এর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রিকলি পেয়ারের রস অ্যালকোহলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে লিভারকে সুরক্ষা দেয়। সেই সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহ স্তর স্থিতিশীল রাখতেও সহায়তা করে।

বিটরুট জুস

বিটরুট জুসকে বর্তমান সময়ে সুপার ফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে আছে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নানা উপাদান। অনেকে আবার পুষ্টিগুণ বাড়াতে বিটরুটের জুসের সঙ্গে গাজরের জুস মিশিয়ে পান করেন। চমৎকার এই জুস শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। এতে রক্তচাপ কমে ও শরীর বিষমুক্ত হয়। এতে বিটেইন নামের যে উপাদান থাকে, তা পাকস্থলি ভালো রাখতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এ জুসের জুড়ি নেই।

এই সাতটি খাবার ক্ষতিকর খাবার গ্রহণের অভ্যাসও পাল্টে দেয়। পাশাপাশি লিভার পরিচ্ছন্ন করে পেটের নানা রকম রোগ থেকে মুক্তি দেয়। চিনি, অ্যালকোহল এবং চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে যারা পেটের মেদ অতিরিক্ত বাড়িয়ে ফেলেছেন, তাদের জন্য এই খাবারগুলো পথ্য হিসেবে কাজ করতে পারে

Post a Comment

أحدث أقدم