জীবনে বন্ধুদের ভূমিকা কী? বন্ধু ছাড়া কি জীবন অচল?

খুব ছোটোবেলায় স্কুলে সংস্কৃত পড়ার সময় কিছু শ্লোক পড়েছিলাম। এই শ্লোকটা আমার খুব প্রিয় ছিল। কারণ এটার গূঢ় অর্থ সেই ছোট্ট বয়েসেও বোধগম্য করতে অসুবিধা হয়নি। ক্লাসে দিদিমণি মানে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সেইসময় তাঁর বলা একটা কথা মনে গেঁথে গেছিল, যা এখনও মেনে চলি। "বিপদের দিনে যে পাশে থাকে সেই প্রকৃত বন্ধু" — বন্ধুর ভুমিকাও এক কথায় তাই।

জীবনে বন্ধুর ভুমিকাঃ

  • যে কোনো বিপদের সময় বিনাদ্বিধায়, বিনা প্রশ্নে সময়- অসময় ভেদে সর্ব শক্তি ও মানসিক বল দিয়ে পাশে থাকবেন।দুর্বিপাকের থেকে কি ভাবে বন্ধুকে রক্ষা করা যায়, কোন সমস্যার সমাধানে বন্ধুর সবথেকে বেশি মঙ্গল হয়, তা দেখবেন।যিনি কিছু বলার আগেই সব বুঝে যাবেন। যিনি আপনার গলা শুনে জিজ্ঞাসা করবেন -"কি হয়েছে রে তোর? কিছু তো হয়েছে। বল আগে কি হয়েছে? শরীর খারাপ না মন?"
  • আপনার দোষ-গুন সঠিক ভাবে নির্ণয় করে তা আপনাকে সোজাভাবে জানাবেন, নাকি আপনার পেছনে সমালোচনা করবেন।দোষ-গুণ সব কিছু সমেত আপনাকে গ্রহণ করবেন।
  • যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যাবে। যিনি গোপনীয়তা রক্ষা করবেন।
  • যাকে মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলতে পারা যাবে — " ঘুম আসছেনা গল্প কর না"। শুনে যে বিরক্ত না হয়ে কারণ জানতে চাইবে।
  • যার সাথে মন উজাড় করে কথা বলা যাবে, পাগলামি করা যাবে কিন্তু ভয় লাগবেনা।
  • যার সাথে মনমালিন্য হলে জানব দুদিন পর আবার অনায়াসে কাছে গিয়ে ধাক্কা দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরতে পারব।
  • যে সব সময় ইতিবাচক প্রভাব ( positive influence ) ফেলবে।যার সাথে প্রাণভরে অনায়াসে অফুরন্ত আলতু-ফালতু কথা বলা যাবে।
  • যে সারাদিন ভালো কাজে ব্যস্ত রাখবে। ভালো কাজ করতে উৎসাহী করবে।
  • যে কোনও অবস্থাতেই কোনও পরিস্থিতিতেই একা করে দিয়ে চলে যাবেনা।
  • প্রেম ভাঙ্গার দুঃখে যে দুদিন পর মাথায় চাঁটি মেরে বলবে - " অনেক মরা কান্না কেঁদেছিস এবার থাম। আর মাথা ধরাস না। আপদ গেছে, বাঁচা গেছে। আবার হবে। চল ফুচকা খাই।" বা আজকাল বলবে " চল মাল খাই।"
  • যে আমার আনন্দে নেচে উঠবে। যে আমার কষ্টে কেঁদে বুক ভাসাবে।
  • যে দুদিন খোঁজ না পেলে খোঁজ নিতে এসে বলবে - " দেখতে এলাম মরে গেছিস কিনা !" আমি খোঁজ নিতে গেলে পাল্টা বলেবে - " বেঁচে আছিস? আমি তো ভাবলাম মরে গেছিস !" অর্থাৎ নির্দ্বিধায় যে অবজ্ঞা করতে পারবে কিন্তু নিশ্চিন্ত হবে জেনে যে আমি ভালো আছি ।
  • যার সাথে সব কিছু ভাগাভাগি করতে মন চাইবে। যাকে দুদিন না দেখতে পেলে মন হু হু করবে। আবার অনেক দূরে থাকলেও মন জানবে যেদিন ডাক দেব সেদিনই সাথে পাব।

জীবনে যদি এরকম একজন বন্ধু থাকে তাহলে সত্যিই সে জীবন অত্যন্ত সুন্দর।জীবনে একজন আদর্শ বন্ধুর ভুমিকা এই রকমই হওয়া উচিত।

বন্ধু ছাড়া জীবন অচল কি না?

না । অচল নয়। শুধু বন্ধু কেন? বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কিছু বা কাউকে ছাড়াই জীবন অচল হয় না। একটা কথা আছে " কারো জন্য বা কোনো কিছুর জন্যই কিছু আটকে থাকে না।" সময় বহমান। জীবন নিজের গতিতে ঠিক এগিয়ে যায়। হতে পারে কিছুদিন গতি শ্লথ হয়ে পড়ে, একটু থমকে দাঁড়ায় । কিন্তু গতিহীন হয়না, অচল হতে পারেনা।আজকের সময়ে প্রত্যেকে অত্যন্ত ব্যস্ত।জীবনের জটিলতার ঘূর্ণিপাকে বেশিরভাগ মানুষই জড়িয়ে। সময়ের অভাব একটা অনেক বড় সমস্যা। বন্ধুত্ব বজায় রাখা রীতিমত কঠিন। অনেকেই একা থাকার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পান। নিজেদের ব্যক্তি জীবনকে গোপন রাখতে চান।বন্ধুদের স্থান নেই সেখানে। তাঁদের জীবন কি অচল? বরং হয়ত বেশি মাত্রায় সচল।হতে পারেন জীবনের খুব সুন্দর এক অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা বঞ্চিত। তাতে কি? সব কিছু সবাইকে পেতেই হবে তা তো নয়। তাই বন্ধু ছাড়া জীবন অচল একথার কোনো ভিত্তি নেই। 

Post a Comment

Previous Post Next Post