গ্রিন টি নয় গ্রিন মিন্ট টি অর্থাৎ সবুজ পুদিনা চা'তেই উপকার বেশি।
গ্রিন টি কী-
প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে ‘গ্রিন টি’ আসলে কি? অনেকেই জানেন না যে গ্রিন টি আর আমাদের বাসায় রাখা জার ভর্তি চা পাতা একই গাছ থেকে আসে। আমাদের চা পাতা যেভাবে গাছ থেকে ছিঁড়ে নেয়া হয়, সেই একই গাছের পাতা থেকে গ্রিন টির জন্য পাতা ছেড়া হয়। তাই ‘গ্রিন টি’ দেখেই এলিয়েন দেখার মতো আঁতকে ওঠা বা খুশিতে আটখানা হবারও কোন কারণ নেই।
চা-গাছের সতেজ সবুজ পাতা রোদে শুকিয়ে তাওয়ায় সেঁকে গ্রিন টি প্রস্তুত করা হয়। এর রং হালকা হলদে সবুজ। এই চায়ে পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড নামের দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা চা তৈরির পরও অক্ষুণ্ন থাকে।
গ্রিন টি কি সবার জন্য সেইফ?
তো চলুন এই ভিত কতটুকু শক্ত একটু দেখে আসি।
১) গ্রিন টি খেলেই সবাই শুকিয়ে যায়!
গ্রিন টি খেলেই কি আপনি শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবেন?- না। এতে আছে কিছু এক্সট্রা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা নরমাল চা পাতায় থাকে না।
অনেকেই মনে করেন খাওয়ার পরপরই গ্রিন টি পান করলে জাদুবলে সব ক্যালরি ঝরে যাবে, যা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। খাওয়ার পরপরই খাবারে থাকা আমিষ পুরোপুরি হজম হয় না। তাই এই সময় গ্রিন টি পান করলে হজম প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। তাই খাওয়ার পরপর গ্রিন টি পান করা যাবে না।
চায়ে মধু মিশিয়ে পান করতে পছন্দ করেন অনেকেই। তবে ফুটন্ত গ্রিন টিতে মধু যোগ করলে মধুর পুষ্টিগুণ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই চুলা থেকে নামিয়ে চায়ের তাপমাত্রা কুসুম গরম অবস্থায় পৌঁছালে তারপর মধু মেশাতে হবে।
সকাল বেলা গ্রিন টি খাওয়ার ঠিক আগে কিংবা পরেই ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কেউ আবার গ্রিন টি দিয়েই ওষুধ খান, যা আরও ক্ষতিকর। কারণ ওষুধের রাসায়নিক উপাদান গ্রিন টিয়ের সঙ্গে মিশে অ্যাসিডিটি সৃষ্টি করতে পারে।
পানিতে দীর্ঘসময় গ্রিন টিয়ের পাতা ডুবিয়ে রাখলেই তা থেকে বেশি পুষ্টি উপাদান বের হবে এমন ধারণা ভুল। বরং এতে চায়ের স্বাদ নষ্ট হবে, বিষাক্ত হয়েও উঠতে পারে।
বেশি উপকারের লোভে কিছু মানুষ দুটি গ্রিন টিয়ের ব্যাগ একসঙ্গে ডুবিয়ে দেন এক কাপ পানিতে। তবে প্রতিনিয়ত দুটি টি ব্যাগ দিয়ে এক কাপ চা পান করলে হজমের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি হতে পারে।
গ্রিন টি প্রতিদিন ৩-৪ কাপ খেলে সর্বোচ্চ ৭০ ক্যালরি কমতে পারে। কারণ গ্রিন টি মাত্র কিছু সময়ের জন্য আপনার দেহের ক্যালরি খরচ করার হার বাড়িয়ে দেয়। এই টাইম টুকু পার হয়ে গেলে আবার দেহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। ক্যালরি বার্ন আরও বেশি হয় কিসে জানেন? ব্ল্যাক কফিতে! কিন্তু রোজ ৪ কাপ কড়া ব্ল্যাক কফি খেলে ঘুম নষ্ট হয়ে, কন্সটিপেশন হয়ে এবং স্কিন নষ্ট হয়ে যে অবস্থা আপনার হবে সেটা কারই কাম্য নয়!! তাই একটু এক্সট্রা ক্যালরি বার্ন করার জন্য হালকা গ্রিন টি-ই ডাক্তাররা দুধ চা, চিনি দেয়া রঙ চা বা কফি থেকে বেশি সাজেস্ট করেন।
অনেকে আবার শুকিয়ে যাওয়ার ভয়ে গ্রিন টি খান না। তাদের জন্যও একই কথা, গ্রিন টি আপনার মেটাবলিজম বাড়াতে একটু হেল্প করে। এটা গ্রিন টির আরও অনেকগুলো বিশাল বিশাল উপকারিতার একটি মাত্র। তাই এই একটা পয়েন্ট-কেই মেইন ধরে নিয়ে গ্রিন টি খাবই না অথবা রোজ খালি গ্রিন টি-ই খাব, এমন একটা জেদ ধরে বসে থাকবেন না। এটা একটা হেল্পফুল বেভারেজ, সেভাবেই এটাকে দেখুন।
২) গ্রিন টি মেয়েদের খাওয়া ঠিক না, আয়রন কমে যায়!
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউশন অফ হেলথ, আমেরিকার জার্নাল ‘মেডিসিন প্লাস’ কি বলে দেখি-
গ্রিন টি তে থাকা ট্যানিন আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের আয়রন এবং বি-১২ ভিটামিন শোষণ একটু কমিয়ে দেয়। কারণ এই ট্যানিন অনু আয়রনের সাথে বিক্রিয়া করে তাকে বেঁধে ফেলে।
ওকে বোঝা গেল। তার মানে কি? বাপ বাপ বলে গ্রিন টি সব ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে ফেসবুকে “গ্রিন টিতে মৃত্যু” নামক পোস্ট লিখে ঢোল পিটাতে হবে? নাকি ব্রেন একটু ইউজ করব?একটু দেখব ‘আয়রন কমে’ বলেই বাংলার সব গ্রিন টি নামক ছাই পাশ খেকো মেয়েদের কালকেই অ্যানিমিয়া হয়ে যাবে কি না?
প্রথমত, আয়রন আর বি-১২ শোষণ কমলে ছেলে মেয়ে, বাচ্চা বুড়ো সবারই কমবে । তাই মেয়ে মানেই আয়রন সমস্যায় ভোগে, মেয়ে মানেই গ্রিন টি নিষিদ্ধ এটা একেবারেই ভুল।
দ্বিতীয়ত, লেখাটা আবার পড়ুন, “আয়রন এবং বি-১২ শোষণ একটু কমিয়ে দেয়” মানে অলরেডি যে খাবার আপনার পাকস্থলীতে পরিপাক হচ্ছে সেখান থেকে দেহ একটু কম আয়রণ শোষণ করবে।
এই জার্নাল ‘কান নিয়েছে চিলে’-বলে পাড়া মাথায় তুলতে যারা ভালবাসেন তাদের জন্য আরও কি বলে দেখি-
– বেলজিয়ামের এক ইউনিভার্সিটি রিসার্চে খুব ক্লিয়ারলি দেখা গেছে যে- গ্রিন টি দেহের এক্সিজটিং আয়রন লেভেলে তারতম্য আনে না।
– গ্রিন টি-এর সাথে এক স্লাইস লেবুর রস খেলেই এই আয়রন শোষণজনিত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। কারণ লেবুর ভিটামিন সি আয়রন শোষণ বাড়ায়। কাপের ভেতরে একটু লেবুর রস গ্রিন টি-এর স্বাদ বাড়াতেও সাহায্য করবে।
– এবং গ্রিন টি খাওয়ার সাথে অ্যানিমিয়া বা আয়রন ডিপ্লিশনের কোন সম্পর্কই আজ পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। সুতরাং চিলের পেছনে দৌড়ানো বন্ধ রাখতে পারেন।
৩) প্রেগন্যান্ট অবস্থায় গ্রিন টি খাওয়া!
আগের দুই পয়েন্টে হাস্যকর লজিকে গ্রিন টি না খাওয়ার কারণগুলো দেখেছি।
এবার দেখি আরেক লজিক যেখানে বলা হয়- যেহেতু প্রেগন্যান্ট সেহেতু কফি বা দুধ চা'র বদলে রঙ চা বা গ্রিন টি খাওয়া ভালো!
এখানেও একই প্রশ্ন, রঙ চা, দুধ চা, গ্রিন টি- এই সব চা পাতা কোথা থেকে এসেছে সেটা কি আপনি জানেন? ভুলে গেলে প্রথম পয়েন্ট আবারো একটু দেখে আসুন। কফিতে থাকে প্রচুর ক্যাফেইন, রঙ চা ডেইলি ২-৩ কাপ খেলেও অতিরিক্ত ক্যাফেইন ইনটেক হয়ে যায়। দুধ চায়ের বেলায়ও একই, সাথে আছে আনহেলদি গুঁড়ো দুধ, কনডেনসড মিল্ক আর অতিরিক্ত চিনি। এসবই প্রেগন্যান্ট নারী এবং অনাগত শিশুর জন্য খারাপ।
কিন্তু গ্রিন টি ডেইলি ৩ কাপ প্রেগন্যান্ট অবস্থায় খেলে কি হবে? প্রথমত কম হলেও একটা পরিমাণে ক্যাফেইন আপনার দেহে ঢুকবে। যেটা কাম্য নয়। প্লাস গ্রিন টি-এর ট্যানিন অনাগত শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। একারণে ডাক্তাররা গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি-ও এড়িয়ে চলতে বলেন।
তো, গর্ভাবস্থায় কি খেতে পারেন? চা বা একটু উষ্ম বেভারেজ খাওয়ার হ্যাবিট থাকলে অনায়াসে বেছে নিতে পারেন ক্যামোমাইল টি, এটা ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। শুধু আদা চা খেতে পারেন (চা পাতা ছাড়া) , এটা মর্নিং সিকনেস কমাতে সাহায্য করবে।
শেষ কথা এই যে, এক মাত্র গর্ভবতী নারী ব্যতীত আর কেউই গ্রিন টি খেয়ে বড় কোন ঝুঁকিতে পড়ছেন না। আর যেসব খুব ছোট খাটো দোষ মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, তার ১০০ গুণ দিনে ৪-৫ কাপ পাম ওয়েল দিয়ে বানানো কনডেনসড মিল্ক আর ৩ চামচ চিনি দেয়া দুধ চা খেয়ে অলরেডি নিজের দেহে নিয়ে বসে আছি।
গ্রিন টি অন্যান্য বেভারেজের মতই একেবারেই নরমাল একটা ড্রিংক। প্রসেসিং এর কারণে আমাদের সাধারণ চা থেকে এটা একটু ভালো। তাই সাধারণ চা, এক্সট্রা চিনি- এসবের বদলে গ্রিন টি খেলে ভালো, খেতে না চাইলেও জোর করে খাওয়ার দরকার নেই। একে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে আকাশে তোলা বা খেলেই অ্যানিমিয়া হবে, পড়ে বাচ্চা হবে না এসব গুজব রটিয়ে কাদায় ফেলা, দুটোই আপনার মূল্যবান সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
গ্রিন টি একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হলেও সবার জন্য স্বাস্থ্যকর নাও হতে পারে।
তাই যারা গ্রিন টি খাবেন না-
- গর্ভবতী নারী
- ইনসোমনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি
- রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগী
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে, গ্রিন টি তে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ হওয়া সত্বেও তা ৩ কাপের বেশি খাওয়া ঠিক না। এর চেয়ে বেশি গ্রিন টি খেলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে।
খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক ওয়েবসাইটে গ্রিন টি নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে এই চা থেকে উপকার পাওয়ার পন্থা এখানে দেওয়া হল।
গ্রিন টি পান করার সঠিক সময় –
নাস্তা করার পর
সকালে আপনি অবশ্যই চা খাবেন না খালি পেটে। এতে দেখা যাবে আপনার ডিহাইড্রেশন এর সমস্যা হবে। আর তাছাড়া খালি পেটে গ্রিন টি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কিংবা আলসারও হতে পারে। সুতরাং সকালের নাস্তায় হেলদি কোন খাবার খান এবং এরপর গ্রিন টি খান।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে
আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য গ্রিন টি খান তবে তার জন্য সঠিক সময় হল রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ঠিক ২ ঘন্টা আগে। রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে গ্রিন টি আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে আর এটা অনেক বেশি কাজ করবে ততক্ষন পর্যন্ত যতক্ষণ না আপনি অন্যকিছু খাবেন। রাতে তো আর আপনি অন্যকিছু খান না তাই ভালো করে কাজ করতে পারে গ্রিন টি। অনেক সময় চা আপনার ঘুম নষ্ট করে এজন্যে চা পান করার সাথে সাথে ঘুমাতে না গিয়ে ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগেই পান করুন।
ব্যায়াম করার পূর্বে
ব্যায়াম করার আধাগন্টা আগে গ্রিন টি পান করুন। যদি আপনি আধাঘন্টা আগে পান করেন তবে এতে করে আপনার কর্মক্ষমতা বাড়বে। এমন কি এটা আপনার ওজন এবং মেদ কমাতে সাহায্য করবে।
খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে অথবা পরে
অনেকেই খাবার খাওয়ার পরপরই চা পান করেন। খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পরে অথবা আগে গ্রিনটি পান করুন।
জানলেন তো কোন সময়গুলো সঠিক গ্রিন টি পান করার জন্য? এবার আমি শেয়ার করব কোন সময়ে গ্রিন টি পান করবেন না-
- সকালে খালি পেটে কখনোই গ্রিন টি পান করবেন না।
- খাওয়ার সময়গুলোতে গ্রিন টি পান করবেন না। যেমন রাতের খাবার অথবা দুপুরের খাবারের সময়।
- একদিনে ২-৩ কাপের বেশি পান করবেন না।
- গ্রিন টি এর সাথে গুঁড়া দুধ কিংবা চিনি মেশাবেন না।
- ঘুমের সমস্যাজনিত কারণ এড়িয়ে যেতে গভীর রাতে গ্রিন টি পান করবেন না। এ ধরনের চা’তে যে ক্যাফেইন আছে তা অধিকাংশ গ্রিন টি ব্র্যান্ডে উল্লেখ নেই। এটা অবশ্যই খেয়াল রাখার বিষয়। কেউ যদি অসতর্কতাবশত রাতে গ্রিন টি পান করে ফেলে তবে তার শান্তির ও আরামদায়ক ঘুম উবে যেতে পারে নিমেষেই।
সুতরাং মেনে চলুন গ্রিন টি পান করার সঠিক সময় এবং নিজেকে করে তুলুন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
অন্যদিকে পুদিনা পাতার চা দূর করবে যতসব মারাত্মক সমস্যা-
পুদিনা পাতা আমাদের সকলের কাছেই পরিচিত। পুদিনা একটি সাধারণ আগাছা ধরনের গাছ। কাণ্ড ও পাতা বেশ নরম। কাণ্ডের রঙ বেগুনি, পাতার রঙ সবুজ। ছোট গুল্ম জাতীয় এই গাছের পাতা ডিম্বাকার, পাতার কিনারা খাঁজকাটা ও সুগন্ধীযুক্ত হয়। পাতা কিছুটা রোমশ ও মিন্টের তীব্র গন্ধযুক্ত। পুদিনা পাতার মূল, পাতা, কান্ড সহ সমগ্র গাছই ওষুধীগুনে পরিপূর্ণ । বিশ্বের অনেক দেশেই পুদিনার গাছ জন্মে। এর পাতা সুগন্ধি হিসাবে রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
অনেকেই পুদিনা পাতার তৈরি চা পান করতে পছন্দ করেন। কিন্তু আপনি জানেন কি এই পুদিনা পাতার চা আমাদের দেহের জন্য কতোটা স্বাস্থ্যকর? প্রতিদিন মাত্র ১ কাপ পুদিনা পাতার চা অনেক মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
যেমন-
১) উচ্চ রক্ত চাপ দূর করতে
পুদিনা পাতা পটাশিয়ামে ভরপুর, এতে করে উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা কমায় এবং হার্টবিটের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে।
২) মুখের নানা ইনফেকশনের সমস্যা সমাধান করতে
পুদিনা পাতার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে বিশেষ ভাবে সহায়ক। পুদিনা পাতার চা পানে মুখের ইনফেকশন জনিত সমস্যা দূর হয় এবং নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
৩) দেহের নানা অঙ্গের ব্যথা দূর করতে
মাথা ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা এমনকি পেটে ব্যথার মতো সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে পুদিনা চা।
মাইগ্রেনের ব্যাথা দুর করতে নাকের কাছে টাটকা পুদিনা পাতা ধরুন। এর গন্ধ মাথাব্যাথা সারাতে খুবই উপকারি।
৪) বিষণ্ণতা দূর করতে
পুদিনা পাতার চায়ের রয়েছে মানসিক চাপ দূর করে মস্তিষ্ক রিলাক্স করার জাদুকরী ক্ষমতা। মানসিক চাপের পাশাপাশি এটি দূর করে বিষণ্ণতার সমস্যাও।
৫) স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করতে
গবেষণায় দেখা যায় পুদিনা পাতার সুঘ্রাণ মস্তিষ্ককে সজাগ, সচেতন রাখে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নতিতে সহায়তা করে। শুধুমাত্র পুদিনা পাতার ঘ্রাণ নেয়াই মস্তিষ্কের জন্য বেশ ভালো।
৬) ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে
পুদিনার মেন্থল নামক উপাদান নানা ধরণের ক্যান্সারের কোষ দেহে গঠন হতে বাঁধা প্রদান করে, বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সার।
৭) বমি বমি ভাব সমস্যার সমাধান করতে
অনেকেই নানা কারণে বমি ভাবের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এমন অবস্থায় খাওয়া দাওয়া করা যায় না একেবারেই। এই বমি ভাবের সমাধান করে দেবে পুদিনা চা।
৮) অ্যাজমা ও শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করতে
পুদিনার অসাধারণ ঘ্রাণ শ্বাসপ্রশ্বাস নালীর নানা সমস্যা জনিত রোগ দূর করতে সহায়তা করে। পুদিনায় রোজমেরিক এসিড নামের এক ধরনের উপাদান থাকে। এটি প্রাকপ্রদাহী পদার্থ তৈরীতে বাধা দেয়। ফলে অ্যাজমা হয় না। এছাড়াও এ ঔষধি প্রোস্টসাইক্লিন তৈরীতে বাধা দেয়। তাতে শাসনালী পরিষ্কার থাকে।
প্রতিদিন পুদিনা চা পানে অ্যাজমা সহ শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাও দূর হয়।
৯) মুখের দুর্গন্ধ দুর করতে ও হজম শক্তি বাড়াতে
মুখের দুর্গন্ধ দুর করতে পুদিনা পাতা জলের সাথে মিশিয়ে কুলি করুন। উপকার পাবেন।
পুদিনা পাতা হজম শক্তি বাড়ায়,মুখের অরুচি ও গ্যাসের সমস্যা দুর করে, কর্মক্ষমতা বৃদ্বি করে ও শরীর ঠান্ডা রাখে।
দীর্ঘদিন রোগে ভুগলে বা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থাকলে অনেক সময় অরুচি হয়।এক্ষেত্রে পুদিনা পাতার রস ২ চা চামচ,কাগজি লেবুর রস ৮-১০ ফোটা,লবণ হালকা গরম জলতে মিশিয়ে সকাল বিকাল ২ বেলা খান।এভাবে ৪-৫ দিন খেলে অরুচি দুর হয়ে যাবে।
১০) হেচকি বন্ধ করতে
অনবরত হেচকি উঠলে পুদিনা পাতার সাথে গোলমরিচ পিষে ছেকে নিয়ে রসটুকু পান করুন।কিছুক্ষনের মধ্যেই হেচকি বন্ধ হয়ে যাবে।
১১) কফ দুর করতে
কফ দুর করতে পুদিনা পাতার রস,তুলসী পাতার রস,আদার রস ও মধু একসাথে মিশিয়ে খান। পুরোনো কফ দুর করতেও এই মিশ্রণ অতুলনীয়।
১২) পেটে গ্যাস জমে গেলে
যেকোনো কারনে পেটে গ্যাস জমে গেলে পুদিনা পাতা কার্যকরী ভুমিকা পালন করে। পুদিনার রস ২ চা চামচ, সামান্য লবন, কাগজী লেবুর রস ৮/১০ ফোঁটা, হালকা গরম জলর সাথে মিশিয়ে সারাদিন ২-৩ বার খেলে পেটে গ্যাস ভাব কমে আসে।
১৩) পিত্তে শ্লেষ্মার জ্বর, অম্লপিত্ত, আমাশা ইত্যাদি দূর করতে
পিত্তে শ্লেষ্মার জ্বর, অম্লপিত্ত, আমাশা, অজীর্ণ, উদরশূল, প্রভৃতির কারনে অনেকসময় আমাদের বমি বমি ভাব আসে। এসময় পুদিনার শরবতের সাথে এক চা চামুচ তেঁতুল মাড় ও চিনি মিশিয়ে খেলে বমিভাদ দূর হয়ে যায়।
১৪) তাৎক্ষণিকভাবে ক্লান্তি দুর করতে
পুদিনা পাতার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। ক্লান্তি নিমিষেই দুর হয়ে যাবে।
১৫) পেটের পীড়া দূর করতে
এটি ইরেটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস) এবং দীর্ঘস্থায়ী বদহজমের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর। এছাড়াও পুদিনা কোলনের পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রন করে।
যেভাবে তৈরি করবেন লেমন স্বাদে পুদিনা চাঃ
- ২ কাপ পানিতে ১ মুঠো পুদিনা পাতা ধুয়ে সামান্য ছেঁচে দিয়ে ফুটাতে থাকুন।
- যখন পানি ফুটে ১ কাপ পরিমাণে হবে তখন ছেঁকে নামিয়ে নিন।
- এতে পছন্দ অনুযায়ী মধু ও মাল্টা/লেবুর রস বা এদের তাজা খোসা/কুচি মিশিয়ে নিন।
- কিছুক্ষন রেখে দিয়ে কুসুম গরম অবস্থায় পান করুন।
Post a Comment